Pages

Saturday, November 16, 2013

বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্য মুক্তাগাছার মন্ডা

বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্য মুক্তাগাছার মন্ডা


মনোনেশ দাস : কুমিল্লার রসমালাই, পোড়াবাড়ির চমচম, বগুড়ার দই, নাটোরের কাচাগোল্লা ,নেত্রকোনার বালিশ ইত্যাদি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী  মিষ্টিজাত খাদ্যদ্রব্য । হাজারো ঐতিহ্যের দেশ বাংলাদেশ। কোন কোন স্থানে এমন কিছু উল্লেখযোগ্য বস্তু আছে যার কারণে ঐ স্থানটি বিখ্যাত হয়ে আছে। তেমনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার সঙ্গে মিশে আছে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিজাত দ্রব্য মন্ডার নাম। মুক্তাগাছার মন্ডার নাম শোনেননি  ভোজনরসিকদের এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । মুক্তাগাছায় বেড়াতে এসে জমিদারদের বাড়ি দেখে যাওয়া যেমন অপরিহার্য , তেমনি এখান থেকে প্রকৃত মন্ডার স্বাদ না নিয়ে ফিরে গেলে ভ্রমনটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলে পর্যটকদের অভিমত। মন্ডা নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এখন থেকে ২০০ বছরেরও অধিক আগে মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ মন্ডার জনক গোপাল পাল এক রাতে স্বপ্নাদিষ্ট হলেন । শিয়রে দাঁড়িয়ে এক ঋষি তাকে আদেশ দিচ্ছেন মন্ডা মিষ্টি তৈরি কর। পরদিন গোপাল ঋষির আদেশে চুল্লি খনন শুরু করলেন । দৈবাৎ উদয় হলো সাধু । তিনি হাত বুলিয়ে দিলেন চুল্লিতে। শিখিয়ে দিলেন মন্ডা তৈরির কলাকৌশল গোপালকে । দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি হলো মন্ডা। গোপাল তার নব উদ্ভাবিত মন্ডা পরিবেশন করলেন তৎকালীন জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর রাজদরবারে। মন্ডা খেয়ে মহারাজা পেলেন পরম তৃপ্তি , আর বাহবা দিলেন গোপালকে । শুরু হলো মন্ডার যাত্রা। গোপাল সম্বন্ধে জানা যায়, বাংলা ১২০৬ সালে ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। নবাব সিরাজদৌলার মৃত্যুর পর গোপাল রাজশাহীতে চলে আসেন। পরে বাংলা ১২৩০ সালে তিনি মুক্তাগাছায় বসতি গড়েন। প্রথম মন্ডা তৈরি হয় বাংলা ১২৩১ সালে। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মূখ্য মন্ত্রী ডাঃ বিধান কৃষ্ণ রায়, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সারোদ বাদক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এই মন্ডা খেয়ে উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন। 
মনোনেশ দাস : কুমিল্লার রসমালাই, পোড়াবাড়ির চমচম, বগুড়ার দই, নাটোরের কাচাগোল্লা ,নেত্রকোনার বালিশ ইত্যাদি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী  মিষ্টিজাত খাদ্যদ্রব্য । হাজারো ঐতিহ্যের দেশ বাংলাদেশ। কোন কোন স্থানে এমন কিছু উল্লেখযোগ্য বস্তু আছে যার কারণে ঐ স্থানটি বিখ্যাত হয়ে আছে। তেমনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার সঙ্গে মিশে আছে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিজাত দ্রব্য মন্ডার নাম। মুক্তাগাছার মন্ডার নাম শোনেননি  ভোজনরসিকদের এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । মুক্তাগাছায় বেড়াতে এসে জমিদারদের বাড়ি দেখে যাওয়া যেমন অপরিহার্য , তেমনি এখান থেকে প্রকৃত মন্ডার স্বাদ না নিয়ে ফিরে গেলে ভ্রমনটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলে পর্যটকদের অভিমত। মন্ডা নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এখন থেকে ২০০ বছরেরও অধিক আগে মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ মন্ডার জনক গোপাল পাল এক রাতে স্বপ্নাদিষ্ট হলেন । শিয়রে দাঁড়িয়ে এক ঋষি তাকে আদেশ দিচ্ছেন মন্ডা মিষ্টি তৈরি কর। পরদিন গোপাল ঋষির আদেশে চুল্লি খনন শুরু করলেন । দৈবাৎ উদয় হলো সাধু । তিনি হাত বুলিয়ে দিলেন চুল্লিতে। শিখিয়ে দিলেন মন্ডা তৈরির কলাকৌশল গোপালকে । দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি হলো মন্ডা। গোপাল তার নব উদ্ভাবিত মন্ডা পরিবেশন করলেন তৎকালীন জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর রাজদরবারে। মন্ডা খেয়ে মহারাজা পেলেন পরম তৃপ্তি , আর বাহবা দিলেন গোপালকে । শুরু হলো মন্ডার যাত্রা। গোপাল সম্বন্ধে জানা যায়, বাংলা ১২০৬ সালে ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। নবাব সিরাজদৌলার মৃত্যুর পর গোপাল রাজশাহীতে চলে আসেন। পরে বাংলা ১২৩০ সালে তিনি মুক্তাগাছায় বসতি গড়েন। প্রথম মন্ডা তৈরি হয় বাংলা ১২৩১ সালে। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মূখ্য মন্ত্রী ডাঃ বিধান কৃষ্ণ রায়, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সারোদ বাদক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এই মন্ডা খেয়ে উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন। 

Thursday, November 14, 2013

নাটোরের কাঁচাগোল্লার ইতিহাস

নাটোরের কাঁচাগোল্লার ইতিহাস


'নাটোরের কাঁচাগোল্লা' নাটোরের বনলতা সেনের মতোই আলোচিত, আদৃত। বাঙ্গালী ভোজনপ্রিয়, অতিথি আপ্যায়নেও এদের জুড়ি নেই। খাবারের পরে মিষ্টিতো থাকা চাই-ই।
যে কোন অনুষ্ঠানে অথবা শুভ সংবাদে মিষ্টি মুখ করানোর প্রচলন বাঙ্গালী সমাজে চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। আর সেই মিষ্টি যদি হয় নাটোরের কাঁচাগোল্লা তবে তো সোনায়-সোহাগা। যারা কোনদিন নাটোরের কাঁচাগোল্লার স্বাদ নেননি তাদের জিভে সব সময় টসটস করে এই অমৃত স্বাদের বিখ্যাত মিষ্টির জন্য।
নাটোরের বনলতা সেনের চাইতেও বেশী রয়েছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা আন্তর্জাতিক পরিচিতি। নাটোরের কাঁচাগোল্লা শুধু একটি মিষ্টির নামই নয়, একটি ইতিহাসেরও নাম।

কাঁচাগোল্লার গোড়ার কথা :

কাঁচাগোল্লা গোল নয়, লম্বা নয়, আবার কাঁচাও নয়। তবুও নাম তার কাঁচাগোল্লা! এই নামেই পরিচিতি দেশ-বিদেশে। আনুমানিক আড়াই’শ বছর পূর্বেও নাটোরের কাঁচাগোল্লার কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়। সুপ্রাচীন কাল থেকে মিষ্টি রসিকদের রসনা তৃপ্ত করে আসছে এই কাঁচাগোল্লা। তবে ১৭৫৭ সাল থেকে এই মিষ্টি ব্যপকভাবে পরিচিতি লাভ করে।

কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির রয়েছে চমৎকার কাহিনী। জনশ্রুতি আছে নিতান্ত দায়ে পরেই নাকি তৈরী হয়েছিল এই মিষ্টি। শহরের লালবাজারের মধুসূদন পালের দোকান ছিল নাটোরের প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান। দোকানে বেশ কয়েকটি বড় বড় চুলা ছিল। মধুসূদন এসব চুলায় দেড় থেকে দু’মণ ছানা দিয়ে রসগোল্লা, পানিতোয়া, চমচম, কালো জাম প্রভৃতি মিষ্টি তৈরি করতেন।
দোকানে কাজ করতেন দশ পনেরজন কর্মচারী। হঠাৎ একদিন মিষ্টির দোকানের কারিগর আসেনি। মধুসূদনের তো মাথায় হাত! এত ছানা এখন কী হবে? এই চিন্তায় তিনি অস্থির। নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেতে ছানাতে তিনি চিনির রস ঢেলে জ্বাল দিয়ে নামিয়ে রাখতে বলেন। এরপর মুখে দিয়ে দেখা যায় ওই চিনিমেশানো ছানার দারুণ স্বাদ হয়েছে। নতুন মিষ্টির নাম কী রাখা হবে এ নিয়ে শুরু হয় চিন্তা ভাবনা।
যেহেতু চিনির রসে ডোবানোর পূর্বে ছানাকে কিছুই করতে হয়নি অর্থাৎ কাঁচা ছানাই চিনির রসে ঢালা হয়েছে, কিন্তু রসগোল্লার ছানাকে তেলে ভেজে চিনির রসে ডোবানো হয়। তাই তার নাম করণ হয়েছে রসগোল্লা। এটা কাঁচা ছানার রসে ডোবানো হয়েছে বলেই এর নাম দেয়া হলো কাঁচাগোল্লা। কাঁচাগোল্লার স্বাদ রসগোল্লা, পানিতোয়া, এমনকি অবাক সন্দেশকেও হার মানিয়ে দেয়। এর রয়েছে একটি মিষ্টি কাঁচা ছানার গন্ধ যা অন্য কোন মিষ্টিতে পাওয়া যায়না।
ধীরে ধীরে মিষ্টি রসিকরা এই মিষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। তখন থেকে মধুসূদন নিয়মিতই এই মিষ্টি বানাতে থাকেন।
কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। কাঁচাগোল্লার চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে মুধুসূদন পালের দোকানে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন মন ছানার কাঁচাগোল্লা তৈরী হতে লাগল। সে সময় ঢোল বাজিয়ে জানানো হতো কাঁচাগোল্লা কথা।

কি ভাবে কাঁচাগোল্লা তৈরী :

খাঁটী দুধের ছানা ও চিনি কাঁচাগোল্লা তৈরীর প্রধান উপাদান। ১ কেজি কাঁচাগোল্লা তৈরি করতে প্রায় ১ কেজি কাঁচা ছানা ও ৪০০ গ্রাম চিনির প্রয়োজন। কড়াইতে চিনি গুলো পানি সহ জ্বাল দিতে হয়। চিনি পরিষ্কার করতে সামান্য কাচা দুধ দিতে হয়।

কড়াইয়ের গাদ ময়লা পরিষ্কার হয়ে গেলে কড়াইয়ে ছানা ঢেলে দিতে হয়। এরপর জ্বাল এবং একই সাথে কাঠের খন্তা দিয়ে নাড়তে হয়। এভাবেই ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধারাবাহিকভাবে নাড়তে নাড়তেই পরিপূর্ণ কাঁচাগোল্লা তৈরী হয়ে যাবে। তবে এই নাড়াচাড়ার মধ্যেই রয়েছে শৈল্পিক কৌশল।
মোটামুটি এই হচ্ছে ১ কেজি কাঁচাগোল্লার হিসাব। বর্তমানে ভাল কাঁচাগোল্লা তৈরিতে শহরের প্রসিদ্ধ মৌচাক মিষ্টান্ন ভান্ডারের পরিচালক এম, এ, রউফ খান জানান, তারা কাঁচাগোল্লাতে এলাচ ব্যবহার করেন না। এতে প্রকৃত কাঁচা ছানার গন্ধ পাওয়া যায়।

দেশ-বিদেশে কাঁচাগোল্লা :

১৭৬০ সালে অর্ধবঙ্গেশ্বরী বাংলার দানশীলা শাসনকর্তা রানী ভবাণীর রাজত্বকালে কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়াতে থাকে। সেই সময় নাটোরে মিষ্টির দোকান ছিল খুবই কম। এসব দোকানে বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা ছাড়াও অবাক সন্দেশ, রাঘবশাহী, চমচম, রাজভোগ, রসমালাই, পানিতোয়া, প্রভৃতি মিষ্টি ছিল অন্যতম।

তবে এর মধ্যে সবার শীর্ষে উঠে আসে কাঁচাগোল্লা। ফলে সে সময় জমিদারদের মিষ্টিমুখ করতে ব্যবহৃত হতো এই বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা। এমনকি বিলেতের রাজ পরিবার পর্যন্ত এই কাঁচাগোল্লা যেত। আরও যেত ভারতবর্ষের সর্বত্র। রাজশাহী গেজেট পত্রিকাতেও কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতির কথা বলা হয়েছে।
কোলকাতার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে সেই সময় কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। কোলকাতা এবং নাটোর শহর একই সময় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ও এই দুই শহরের ঘনিষ্ঠ সার্বক্ষনিক যোগাযোগ থাকায় নাটোরের কাঁচাগোল্লার কথা ভারত, ইংল্যান্ডসহ তৎকালীন বিভিন্ন রাষ্ট্রে নাটোরের কাঁচাগোল্লার কথা ছড়িয়ে পরে। এভাবেই কাঁচাগোল্লা পায় আন্তর্জাতিকতা।

কোথায় পাবেন ভালো কাঁচাগোল্লা :

নাটোরের কিছু উল্লেখযোগ্য দোকান ছাড়া এই মিষ্টি নিলে ঠকার সম্ভাবনা রয়েছে। লালবাজারের মধুসূদন পালের দোকান, নীচা বাজারের কুন্ডু মিষ্টান্ন ভান্ডার, অনুকূল দধি ও মিষ্টান্ন ভান্ডার, ষ্টেশন বাজারের বনলতা মিষ্টান্ন ভান্ডার, ডাবপট্রি  মিষ্টান্ন বান্ডার,ষ্টেশন বাজার রেলগেটের জগন্নাথ মিষ্টান্ন  ভান্ডারে। তবে বর্তমানে কাঁচাগোল্লা বিক্রিতে সর্বশীর্ষে রয়েছে মৌচাক মিষ্টান্ন ভান্ডার। এদের রয়েছে নিজের ৩৮টি গাভী। নিজস্ব জমিতে গো-খাদ্য হিসেবে এরা ঘাসও চাষ করে। আর মিষ্টিতে কোন প্রকার ভেজাল দেয়া হয় না।

কাঁচাগোল্লার দাম :

বর্তমানে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং কোলকাতাতেও নাটোর থেকে যাওয়ার সময় নাটোরের কাঁচাগোল্লা নিয়ে যেতে কেউই ভুল করেন না। কাঁচাগোল্লার বর্তমান মূল্য প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান মৌচাকে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি।

জনশ্রুতি রয়েছে ১৮৪০ সালের দিকে দিঘাপতিয়ার রাজা প্রসন্ন নাথ রায়ের আমলে শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন উৎসবের দিনে উপস্থিত ধর্ম পরায়ন সকলকেই এক বেলচা করে কাঁচাগোল্লা বিতরণ করা হতো। সে সময় প্রতি সের কাঁচাগোল্লার মূল্য ছিল ৩ আনা। তবে কিছু দিন পূর্বেও নাটোরের কাঁচাগোল্লা বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়।
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং রাজ-রাজার দেশ হওয়ায় নাটোরের কাঁচাগোল্লার সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই বাসষ্ট্যান্ড, রেলষ্টেশনে এক শ্রেণীর ধোঁকাবাজ হকারদের কাছ থেকে ভেজাল কাঁচাগোল কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
এটা কখনই নাটোরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোল্লার স্বাদ বহন করে না। এব্যাপারে কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার ফলে এদের উপদ্রব কমেছে।

Source: http://www.poriborton.com

Kachagolla of Natore

Wednesday, November 13, 2013

গৌরনদীর ঐতিহ্য দধি-মিষ্টি

গৌরনদীর ঐতিহ্য দধি-মিষ্টি


জীবন-জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ ৫০ বছর পূর্বে এ পেশায় যোগদান করেছি। নানা প্রতিকূলতার মাঝে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এ পেশাকে অাঁকড়ে ধরে রেখেছি। দেশের ঐতিহ্য বরিশালের গৌরনদীর দধি-মিষ্টি আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। ভোজনবিলাসী মানুষের কাছে গৌরনদীর দধি-মিষ্টি ছাড়া ভোজন রসনা যেন অসমাপ্ত। ঐতিহ্যগত কারণেই ক্রেতা সাধারণের কাছে দধি-মিষ্টি লোভনীয় সামগ্রী। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে গৌরনদীর কিছু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে গুণগত মান খারাপ করে থাকে। তারই মধ্যে সুনামকে ধরে রাখতে অধিক মুনাফার কথা চিনত্মা না করে গৌরনদীর ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য দধি-মিষ্টি তৈরি করে আসছি। বর্তমানে ভাল জিনিস তৈরি করা খুবই কষ্টকর" কথাগুলো বলছিলেন, বংশগতভাবে দধি-মিষ্টি তৈরির পেশায় আসা ও ৫০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনাকারী গৌরনদী বন্দরের গৌরনিতাই মিষ্টান্ন ভা-ারের স্বত্বাধিকারী শচিন্দ্র নাথ ওরফে সচিন ঘোষ (৭৮)। গৌরনদীর ঐতিহ্য দধি, মিষ্টি, ঘি'র সুনাম শুধু বাংলাদেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও এর কদর রয়েছে। বহুকাল থেকে দধি, মিষ্টি, ঘি'র জন্য গৌরনদী বিখ্যাত।
সূত্রমতে, প্রায় দু'বছর আগে ডাওরী ঘোষ নামের এক ঘোষ গৌরনদীতে তৈরি করেছিলেন এ লোভনীয় খাবার। পর্যায়ক্রমে গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী ভোজ্যপণ্যের ধারা ধরে রাখার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন শচিন ঘোষ। এর আগে গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী ভোজ্যপণ্যের ধারা ধরে রেখেছিলেন গেদু ঘোষ, সচিন ঘোষ, জীবন ঘোষ, ঝন্টু ঘোষ ও দিলীপ ঘোষ। তারা ঐতিহ্যবাহী দধি, মিষ্টি, ঘি তৈরি করে সারাদেশে সরবরাহ করে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। পরে তাদের পাশাপাশি কিছু মুসলিম ব্যবসায়ী ঘোষ কারিগরের সহয়তায় এ ব্যবসা শুরম্ন করে সুনাম ধরে রাখেন। সারাদেশে গৌরনদীর দধি, মিষ্টি, ঘি'র যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিবাহ অনুষ্ঠান, বৌভাত, জন্মদিন, মৃতু্যবার্ষিকীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন তদবিরে দধির জন্য দূর-দূরানত্ম থেকে লোকজন আসেন গৌরনদীতে। প্রতিদিন শত শত মণ দধি, মিষ্টি এখান থেকে ঢাকা-বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে চালান দেয়া হয়। দেশের বাইরেও ব্যাপকভাবে গৌরনদীর দধি, মিষ্টি, ঘি'র সুনাম রয়েছে। গৌরনদীর দধির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ১০/১৫ দিনেও স্বাভাবিক আবহাওয়ায় নষ্ট হওয়ায় সম্ভাবনা নেই। যে কোন যানবাহনে সহজে বহন করা যায়। শুকনো মিষ্টি ১ মাসেও নষ্ট হয় না। ঘি ১ বছরেও নষ্ট হয় না।
সচিন ঘোষ জানান, তিনি ১২০ প্রকারের লোভনীয় মিষ্টি তৈরি করতে পারেন। তবে বর্তমানে ১৫ প্রকারের মিষ্টান্ন দ্রব্য তৈরি করেন। এরমধ্যে দধি, চমচম, কালোজাম, শুকনো মিষ্টি, লাদেন মিষ্টি (বড় রসগোলস্না) রসমালাই, ছানার সন্দেশ, ক্ষীরপুরি, মাওয়া, ছানার জিলাপি উলেস্নখযোগ্য। তিনি আরও জানান, ১৯৯০ সালে তার দোকানের কারিগর রণো ঘোষ ডিবি লটারির মাধ্যমে আমেরিকা গমন করে। সেখানে সে (রণো ঘোষ) গৌরনদী মিষ্টান্ন ভা-ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। তার দোকান থেকে শুধু আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীরাই নয়, খোদ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের কাছে সে (রণো ঘোষ) দধি-মিষ্টি বিক্রি করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। গৌরনদীর ঘোষেরা জানান, ১৯৭৪ সালে ঘোষদের জন্য রেশম পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর থেকে সরকারী কিংবা বেসরকারীভাবে সহযোগিতা পাচ্ছেন না গৌরনদীর দধি, মিষ্টি প্রস্তুতকারীরা। ব্যবসায়ীরা চড়া দামে দুধ ক্রয় করে ঘর ভাড়া, বিদু্যত বিল, কর, লাকড়ি খরিদ, কর্মচারীদের বেতন, টালিসহ বিভিন্ন দ্রব্য ক্রয় করে তাদের ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী দধি, মিষ্টি, ঘি'র ঐতিহ্য ধরে রেখে ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ, দুধের বাজার, ডেইরি ফার্ম স্থাপন এখন জরম্নরী হয়ে পড়েছে। আর এ জন্য তারা সংশিস্নষ্ট দফতরের হসত্মক্ষেপ কামনা করেছেন।
_খোকন আহম্মেদ হীরা, গৌরনদী

Tuesday, November 12, 2013

মিষ্টি পরিচয়

মিষ্টি পরিচয়

পুরো দেশেই ছড়িয়ে আছে নানা পদের, নানা স্বাদের মিষ্টি। সবাই সব রকমের স্বাদ সম্পর্কে জানেনও না। আজ কিছু মিষ্টির কথা জানা যাক—
পুরো দেশেই ছড়িয়ে আছে নানা পদের, নানা স্বাদের মিষ্টি। সবাই সব রকমের স্বাদ সম্পর্কে জানেনও না। আজ কিছু মিষ্টির কথা জানা যাক—
পাতক্ষীর: পাতক্ষীর অন্য রকম মিষ্টি। স্বাদে, গন্ধে ও চেহারায় খুবই আলাদা। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান বাজারের কাছে সন্তোষপাড়া গ্রামেই একমাত্র এটি তৈরি হয়। গরুর দুধ জ্বাল দিতে দিতে ঘন হয়ে এলে বিশেষ পাতিলে রাখা হয়। এতে সামান্য চিনি মেশানো হয়। ঠাণ্ডা হয়ে এলে কলাপাতায় মুড়িয়ে বিক্রি করা হয়। পাতায় মোড়ানো হয় বলে নাম হয়েছে পাতাক্ষীর, যা কালক্রমে হয়ে গেছে পাতক্ষীর। সন্তোষপাড়ায় এখন সাতটি পরিবার এটি তৈরি করে। একটি পরিবার দিনে ৫০টি পাতক্ষীর তৈরি করতে পারে।
ডোমারের সন্দেশ: দুধের ছানা, চিনি আর খেজুর গুড়ের মিশ্রণে বিশেষভাবে তৈরি হয় এ সন্দেশ। পাওয়া যায় নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়। নীলফামারী ছাড়িয়ে এর খ্যাতি এখন সারা দেশে। আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে ডোমারের সন্দেশ। ডোমার উপজেলা সদরের আদি দাদাভাই হোটেল অ্যান্ড মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও পলি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এর জন্য খ্যাত। ৭০ বছর ধরে এ দুটি প্রতিষ্ঠান সন্দেশ তৈরি করছে। দাম প্রতি কেজি ৩২০ টাকা।
চ্যাপ্টা রসগোল্লা: মহিষের খাঁটি দুধের ছানা দিয়ে তৈরি হয় চ্যাপ্টা আকারের রসগোল্লা। এটি ‘ম্যানেজারের চ্যাপা রসগোল্লা’ নামে পরিচিত। ৬৩ বছর ধরে এর সুনাম অক্ষুণ্ন। বাইরের কেউ এলে মৌলভীবাজারের মানুষ এ রসগোল্লা দিয়ে আপ্যায়ন করেন। ফিরে যাওয়ার সময়ও সঙ্গে এক প্যাকেট দিয়ে দেন। মহিষের দুধের ছানা বিশেষ পদ্ধতিতে কেটে এ রসগোল্লা তৈরি করা হয়। ছানার সঙ্গে অন্য কিছু মেশানো হয় না।
রাজশাহীর রসকদম: রাজশাহী শহরের প্রায় সব হোটেলেই রসকদম পাওয়া যায়। মিষ্টিটির বয়স প্রায় ৩২ বছর। রসকদম তৈরিতে লাগে দুধ, ছানা, চিনি, চিনির গুলি, সাদা দানা। প্রথমে দুধ, ছানা ও চিনি দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হয়। গরম থাকা অবস্থায়ই আরো কয়েক মিনিট ভালোভাবে নাড়তে হয়। ঠাণ্ডা হলে ছোট ছোট গোল্লা তৈরি করা হয়। তারপর এগুলো সাদা মিষ্টিদানা দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে আধঘণ্টা সময় লাগে।
পোড়াবাড়ীর চমচম: ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের কথা। টাঙ্গাইল শহর থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে পোড়াবাড়ীতে ছিল লঞ্চঘাট। খরস্রোতা ধলেশ্বরীর পাশে ঢালান শিবপুর ঘাটে ভিড়ত স্টিমার, যাত্রীবাহী লঞ্চ আর মালবাহী বড় বড় জাহাজ। তখন পোড়াবাড়ী ছিল জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্র। সে সময় আসাম থেকে দশরথ গৌড় নামে এক ঠাকুর পোড়াবাড়ীতে আসেন। তিনি ধলেশ্বরী নদীর মিষ্টি পানি আর এখানকার গরুর গাঢ় দুধ দিয়ে ‘চমচম’ নামের এ মিষ্টি তৈরি করেন। পোড়াবাড়ীর পানিতে রয়েছে এই মিষ্টি তৈরির মূল রহস্য।
বালিশ: নেত্রকোনা জেলার একটি প্রসিদ্ধ মিষ্টি। আকারে যথেষ্ট বড়, দেখতে অনেকটা বালিশের মতো। এর ওপর ক্ষীরের প্রলেপ থাকায় এটি দেখতে হয় কভারওয়ালা বালিশের মতো।
ছানামুখী: এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় পাওয়া যায়। ছানার তৈরি মিষ্টিটি চার কোনা, ক্ষুদ্রাকার ও শক্ত। এর ওপর জমাটবাঁধা চিনির প্রলেপ যুক্ত থাকে। খেতে খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
কালোজাম: বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায়ই তৈরি করা হয়। কালোজাম বা গুলাব জামুন দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালের একটি জনপ্রিয় মিষ্টি। এটি কালচে লাল রঙের; যা ময়দার গোলায় চিনি, ছানা ও মাওয়া মিশিয়ে ঘিয়ে ভেজে সিরায় জ্বাল দিয়ে বানানো হয়। এ মিষ্টি তৈরির মূল প্রক্রিয়ায় রয়েছে তেলে ভাজা ও সিরায় ভিজিয়ে রাখা। কালোজাম তৈরির উপকরণের মধ্যে রয়েছে গুঁড়ো দুধ, তরল দুধ, বেকিং পাউডার, মাওয়া, তেল, পানি, এলাচ গুঁড়ো, কেশার চিনি। কালোজাম এসেছে আরবীয় মিষ্টি ‘লৌকোমাদেস’ (খড়ঁশড়ঁসধফবং) থেকে। এ মিষ্টি মোগল আমলে খুব জনপ্রিয় ছিল। মাঝে মধ্যে সিরা ব্যবহার করা হতো। এ মিষ্টির কদর সুদূর তুর্কি পর্যন্ত চলে গেছে।
প্রাণহারা: প্রাণহারা সন্দেশের গোলায় গোলাপ পানি মিশিয়ে মাওয়ার প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা এক ধরনের মিষ্টি। এটি খেতে বেশ সুস্বাদু।
মকড়ম: ডিমের সাদা অংশকে ফেটিয়ে এতে চিনি মেশানো হয়। এটি জমাট বাঁধলে মকড়ম প্রস্তুত করা হয়। এ মিষ্টি মুখে দিলে গলে যায়। মিষ্টিটি পুষ্টিকর।

নানান স্বাদের মিষ্টি

নানান স্বাদের মিষ্টি

-মাসুম কবীর..



যদি মিষ্টি খেতে মিষ্টি না হয়ে অন্য কোনো স্বাদের হতো, সে ক্ষেত্রে মিষ্টির নাম হতো কী? মিষ্টি একাধারে যেমন একটি স্বাদের নাম, ঠিক তেমনি মিষ্টি একটি বিশেষ মিষ্টান্ন জাতীয় খাদ্য প্রকার। চায়ে চিনি দিলে বলা হয় মিষ্টি চা। চিনি দিয়ে তৈরি বিস্কুটকে বলা হয় মিষ্টি বিস্কুট। শরবতে লবণের পরিবর্তে চিনি দিলে বলা হয় মিষ্টি শরবত। তাই যদি হয়, তাহলে মিষ্টিতে চিনি দিলে সেটাকে কী বলা হবে? মিষ্টি চিনি? আচ্ছা ঠিক আছে, মিষ্টি নিয়ে যতসব মিষ্টি মিষ্টি কথা না বাড়িয়ে চলো শুনি কিছু মিষ্টি কাহিনী।

মিষ্টি কী

মিষ্টি হলো চিনি বা গুড়ের রসে ভেজানো ময়দার গোলা কিংবা দুধ-চিনি মিশিয়ে তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ছানার-ময়দার টুকরো করা খাবার। আমাদের খাওয়া-দাওয়ায় মিষ্টি একটি অতি জনপ্রিয় উপকরণ। কোনো উপলক্ষ-অনুষ্ঠানই মিষ্টি ছাড়া যেন পূর্ণতা পায় না। মিষ্টির নাম শুনলেই জিভে পানি আসে। বাংলাদেশে মিষ্টিকে পণ্য করে গড়ে উঠেছে অগণিত নামীদামি মিষ্টি বিক্রয়কেন্দ্র। সেই প্রাচীন যুগের লাড্ডু থেকে শুরু করে সন্দেশ, কালোজাম পেরিয়ে আজ মিষ্টির প্রকারভেদ শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে। বিভিন্ন রকমের মিষ্টি স্বাদ, আকারে এমনকি নামকরণে ভিন্নতা নিয়ে জনপ্রিয়।

মিষ্টির প্রকারভেদ
বাংলার মিষ্টিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগে আছে একক উপাদানে তৈরি মিষ্টি। এ ধরনের মিষ্টিতে গুড় বা চিনির সাথে আর কিছু মিশ্রিত থাকে না। যেমন গুড় বা চিনির নাড়– ও চাকতি, পাটালি, বাতাসা, খাজা, ছাঁচ ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধরনের মিষ্টিকে আরো দু’রকমে ভাগ করা চলে। গুড় বা চিনির সাথে দুগ্ধজাত কোনো উপকরণ ছাড়া অন্য দ্রব্য সহযোগে তৈরিকৃত মিষ্টান্ন। যেমন নারকেল, তিল এসবের নাড়–, চিঁড়া, মুড়ি, খৈ-এর মোয়া ইত্যাদি। দুগ্ধজাত দ্রব্যযোগে তৈরি নানান ধরনের মিষ্টি রসিক ও মিষ্টিপ্রিয় মানুষের সুপরিচিত। চিনির সাথে ছানার সংযোগে তৈরি হয় সন্দেশ ও মণ্ডা। আবার এই ছানা রসে মাখিয়ে তৈরি হয় রসগোল্লা, দুধে ডোবালে রসমালাই। বেসনের ছোট ছোট দানা ঘিয়ে ভেজে তৈরি হয় বুন্দিয়া, যা দেখতে ছোট বিন্দুর মতো। কড়া পাকে প্রস্তুতকৃত বুন্দিয়াই মতিচুর, লাড্ডুর কাঁচামাল।

ইতিহাস
ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রাচীন মিষ্টি মতিচুরের লাড্ডু। বয়স প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি। আধুনিক সন্দেশ-রসগোল্লার বয়স মাত্র দুই-আড়াই শ’ বছর। বাঙালিরা ছানা তৈরি করতে শিখেছে পর্তুগিজদের থেকে। তাদের কাছ থেকে বাঙালি ময়রারা ছানা ও পনির তৈরির কৌশল শেখে। উপমহাদেশে ছানা তৈরির শিক্ষাবিস্তার অনেক পরের ঘটনা।
সন্দেশ ছানা আবিষ্কারের আগে ছিল। আগের দিনে সন্দেশ তৈরি করা হতো বেসন, নারকেল ও মুগের ডালের সঙ্গে চিনির সংযোগে। এ ছাড়া শুধু চিনি দিয়ে তৈরি এক ধরনের চাকতিকেও অনেক সময় সন্দেশ বলা হতো। চিনির সঙ্গে ছানার রসায়নে আধুনিক সন্দেশ ও রসগোল্লার উদ্ভাবন অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে। এই আধুনিক সন্দেশ রসগোল্লার আবিষ্কর্তা হুগলির হালুইকররা। পরে তারা কলকতায় এসে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একে জগদ্বিখ্যাত করে তোলেন। প্রথম দিকে ছানার সন্দেশকে বলা হতো ‘ফিকে সন্দেশ’। কারণ, এ সন্দেশে আগের দিনের সন্দেশের চেয়ে মিষ্টি কম।
রসের রসিক বাংলাদেশীরা চিনির সিরায় ডোবানো বিশুদ্ধ ছানার গোল্লাকে নাম দিয়েছে রসগোল্লা। পরে ছানা ও চিনির রসায়নে নানা আকৃতি ও স্বাদে নানা নামে মিষ্টির সম্ভার হয়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে আছে লেডিকেনি, চমচম, পানিতোয়া, কালোজাম, আমৃতি, রসমালাই। রসগোল্লার মতোই গোলাকার লাল রঙের লেডিকেনি নামে মিষ্টিটি তৈরি হয়েছিল ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিংয়ের স্ত্রীর সম্মানে। লোকমুখে এর চলতি নাম লেডিকেনি। ছানার মিষ্টি এপার-ওপার উভয় বাংলায় বিপুল জনপ্রিয় হলেও বঙ্গের বাইরে, বিশেষত ভারতের অন্যত্র এখনো ছানার মিষ্টি তেমন তৈরি হয় না। বহির্বঙ্গের মিষ্টি প্যাড়া, মেওয়ার শুকনো মিষ্টি।

মিষ্টি নির্মাতা
মিষ্টি নির্মাণ বা তৈরি একটি বিশেষ কলা। যারা মিষ্টি তৈরি করেন তাদের বলা হয় ময়রা। এলাকাভিত্তিক মিষ্টির প্রসিদ্ধি ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অনেক মিষ্টিশিল্পী খ্যাতিমান হয়েছেন বিশেষ কোনো মিষ্টি তৈরির জন্য।
বাংলাদেশের বিখ্যাত মিষ্টি
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ বিশেষ মিষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছেন সেখানকার ময়রারা। তাঁদের নিষ্ঠা ও সৃজনশীলতায় ঐতিহ্যবাহী হয়ে উঠেছে সেসব মিষ্টি। আমরা এখন সেসবেরই কয়েকটি সম্পর্কে জানব।   
বগুড়ার দই : বগুড়া জেলার প্রায় ১০০ দোকানে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার দই বেচাকেনা হয়। সে হিসাবে বছরে বিক্রি ১০০ কোটি টাকা। বগুড়াকে দইয়ের শহর বলা হলেও শুরুটা হয়েছিল শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুরে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এ দইয়ের নাম ছিল নবাববাড়ীর দই। স্বাধীনতার পর শহরের মহরম আলী ও বাঘোপাড়ার রফাত আলীর নাম ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ছোট ছোট মাটির পাত্রে (স্থানীয় ভাষায় হাঁড়ি) দই ভরানো হতো। ঘোষদের ছোট ছোট দোকান থাকলেও ওই সময় ফেরি করেই দই বেশি বিক্রি হতো। পরে বগুড়ার দইঘরের মালিক আহসানুল কবির দই তৈরি ও বাজারজাতকরণে নতুনত্ব নিয়ে আসেন। ওজন দিয়ে এই দই বিক্রি হয় না। বিক্রি হয় পিস হিসেবে।
সাদেক গোল্লা : জামতলার রসগোল্লা যশোরের যশ বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয়রা একে বলে সাদেক গোল্লা। যশোর থেকে সাতক্ষীরার বাসে ৩৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই জামতলা বাজার। বাজারের বটতলায় সাদেক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। ১৯৫৫ সালে শেখ সাদেক আলী এ মিষ্টি তৈরি করেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখন ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও নুরুজ্জামান এ মিষ্টি তৈরি ও বিক্রি করছেন। এটি বাদামি রঙের, স্পঞ্জ ধরনের এবং হালকা মিঠা। দেশী গরুর দুধের ছানা ও উন্নতমানের চিনি এর উপাদান। মিষ্টি তৈরির জ্বালানি হিসেবে তেঁতুল কাঠ ব্যবহৃত হয়।
মুক্তাগাছার মণ্ডা : ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মণ্ডার ঐতিহ্য প্রায় ২০০ বছরের। ১৮২৪ সালে প্রথম এ মিঠাই তৈরি করা হয়। এর পর থেকে এটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মণ্ডা প্রস্তুত হয় মূলত গরুর খাঁটি দুধের ছানা ও চিনির মিশ্রণ দিয়ে। দেখতে অনেকটা সন্দেশের মতো। ব্রিটিশ আমলে আটটি মণ্ডায় এক সের হয়ে যেত। এখন আকার ছোট হয়েছে। এক কেজিতে ২২টির মতো মণ্ডা থাকে।
মণ্ডা গোল চ্যাপ্টা আকৃতির মিষ্টান্ন। দেখতে অনেকটা প্যাড়ার মতো। কড়া পাকের সাধারণত চিনি মেশানো ক্ষীরের গরম নরম অবস্থায় গোল তাল পাকানো মণ্ডকে পরিষ্কার শক্ত কোনো তলের ওপর বিছানো কাপড়ের ওপর হাত দিয়ে ছুড়ে আছাড় মেরে চ্যাপ্টা করার কাজটি সম্পন্ন হয়। পরে ঠাণ্ডা হলে শক্ত হয়ে যায় এবং তখন কাপড় থেকে খুলে নেয়া হয়। তাই যেদিকটা নিচে (কাপড়ে লেগে) থাকে সেটা পুরো সমতল হয় আর অন্য দিকটা একটু উত্তল ও কিনারা ফাটা ফাটা হয়। ক্ষীরের রঙের ওপর নির্ভর করে মণ্ডা সাদা বা ঈষৎ হালকা খয়েরি রঙের হয়।
গুঠিয়ার সন্দেশ : বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়ায় গাড়ি থামাতে না পারলে অনেকেরই মন খারাপ হয়। কারণ, এখানকার সন্দেশ। গুঠিয়ার সন্দেশ নামে এর পরিচিতি। গরুর দুধের খাঁটি ছানা, চিনি আর কিশমিশ দিয়ে তৈরি হয় এ সন্দেশ। এক পিস বিক্রি হয় ছয় টাকায়, কেজি ৩০০ টাকা।
কুমিল্লার রসমালাই : দুধ থেকে বিশেষভাবে তৈরি মালাই, চিনি আর ময়দা মিলিয়ে তৈরি হয় রসমালাই। আবহাওয়া, পরিবেশ আর ভালো কারিগরের কারণে কুমিল্লায় রসমালাই ভালো হয়। কেজিপ্রতি দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
নাটোরের কাঁচাগোল্লা : সন্দেশ দুধের ছানা দিয়ে তৈরি এক ধরনের উপাদেয় মিষ্টান্ন। ছানার সাথে চিনি বা গুড় মিশিয়ে ছাঁচে ফেলে সন্দেশ প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। খাদ্য উপাদানের দিক থেকে এটি একটি পুষ্টিকর খাবার। আমাদের উৎসব-আয়োজনে এই নকশাদার উপাদেয় খাবারটির ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। বিভিন্ন এলাকার মিষ্টি তৈরির কারিগরেরা এই সন্দেশ তৈরির ব্যাপারটাকে একটা শৈল্পিক ব্যাপারে পরিণত করে ফেলেছে। নাটোরের কাঁচাগোল্লা এই সন্দেশেরই একটি রূপ। নামে কাঁচাগোল্লা হলেও এটি কিন্তু গোল্লাজাতীয় নয়, আদতে দুধের ছানা থেকে তৈরি শুকনো মিষ্টি। কাঁচাগোল্লার জন্য প্রথমে দুধের ছানা তৈরি করে পানি নিংড়ে নিতে হয়। এরপর গরম চিনির শিরার সঙ্গে মিশিয়ে নাড়তে হয়। শুকিয়ে এলে তৈরি হয় কাঁচাগোল্লা।
আদি চমচম : জনশ্রুতি আছে ‘চমচম’ নামের উৎপত্তি চমৎকার থেকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের আদি চমচমের ইতিহাস বাংলার নবাবী আমলের। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় তথা অবিভক্ত ভারতের মালদহ জেলার থানা ছিল শিবগঞ্জ। সে সময় এ অঞ্চলে ছিল অনেক ময়রার বসবাস। দেশ ভাগের পর অনেকে মালদহে চলে গেলেও বেশ কিছু পরিবার থেকে যায় শিবগঞ্জে। তারা এখনো পৈতৃক পেশা ধরে রেখেছেন।
উলিপুরের ক্ষীরমোহন : ২০ বছর আগে সিরাজগঞ্জ থেকে ভাগ্যের সন্ধানে উলিপুর আসেন হরিপদ ঘোষ। ‘পাবনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ নামে তিনি একটি মিষ্টির দোকান দেন। কারিগরও নিজেই। তাঁর মিষ্টিগুলো ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে বেশি জনপ্রিয়তা পায় ক্ষীরমোহন। গোল্লাটি তুলনামূলক বড় হয়, ঘন রসে ঢাকা থাকে।
পাতক্ষীর : পাতক্ষীর অন্যরকম মিষ্টি। স্বাদে, গন্ধে ও চেহারায় খুবই আলাদা। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান বাজারের কাছে একমাত্র সন্তোষপাড়া গ্রামেই এটি তৈরি হয়। গরুর দুধ জ্বাল দিতে দিতে ঘন হয়ে এলে বিশেষ পাতিলে রাখা হয়। এতে সামান্য চিনি মেশানো হয়। ঠাণ্ডা হয়ে এলে কলা পাতায় মুড়িয়ে বিক্রি করা হয়। পাতায় মোড়ানো হয় বলে নাম হয়েছে পাতাক্ষীর, যা কালক্রমে হয়ে গেছে পাতক্ষীর। সন্তোষপাড়া গ্রামে এখন সাতটি পরিবার এটি তৈরি করে। একটি পরিবার দিনে ৫০টি ক্ষীর তৈরি করতে পারে।
ডোমারের সন্দেশ : দুধের ছানা, চিনি আর খেজুর গুড়ের মিশ্রণে বিশেষভাবে তৈরি হয় এ সন্দেশ। পাওয়া যায় নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়। নীলফামারী ছাড়িয়ে এর খ্যাতি এখন সারা দেশে। আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে ডোমারের সন্দেশ। ডোমার উপজেলা সদরের আদি দাদাভাই হোটেল অ্যান্ড মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এবং পলি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এর জন্য খ্যাত। প্রায় ৭০ বছর ধরে এ দু’টি প্রতিষ্ঠান সন্দেশ তৈরি করছে। দাম প্রতি কেজি ৩২০ টাকা।
চ্যাপ্টা রসগোল্লা : মহিষের খাঁটি দুধের ছানা দিয়ে তৈরি হয় চ্যাপ্টা আকারের রসগোল্লা। এটি ‘ম্যানেজারের চ্যাপা রসগোল্লা’ নামে পরিচিত। ৬৩ বছর ধরে এর সুনাম অক্ষুণœ। বাইরের কেউ এলে মৌলভীবাজারের মানুষ এ রসগোল্লা দিয়ে আপ্যায়ন করেন, ফিরে যাওয়ার সময়ও সঙ্গে এক প্যাকেট দিয়ে দেন। মহিষের দুধের ছানা বিশেষ পদ্ধতিতে কেটে এ রসগোল্লা তৈরি করতে হয়। ছানার সঙ্গে অন্য কিছুই মেশানো হয় না।
রাজশাহীর রসকদম : রাজশাহী শহরের প্রায় সব হোটেলেই রসকদম পাওয়া যায়। মিষ্টিটির বয়স প্রায় ৩২ বছর। রসকদম তৈরিতে লাগে দুধের মোয়া, ছানা, চিনি, চিনির গুলি, সাদা দানা। প্রথমে দুধের মোয়া, ছানা ও চিনি দিয়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হয়। গরম থাকা অবস্থায়ই আরো কয়েক মিনিট ভালোভাবে নাড়তে হয়। ঠাণ্ডা হলে ছোট ছোট গোল্লা তৈরি করা হয়। তারপর এগুলো সাদা মিষ্টি দানা দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে আধঘণ্টা সময় লাগে।
পোড়াবাড়ীর চমচম : ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের কথা। টাঙ্গাইল শহর থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে পোড়াবাড়ীতে ছিল লঞ্চঘাট। খরস্রোতা ধলেশ্বরীর পাশে ঢালান শিবপুর ঘাটে ভিড়ত স্টিমার, যাত্রীবাহী লঞ্চ আর মালবাহী বড় বড় জাহাজ। তখন পোড়াবাড়ী ছিল জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্র। সে সময় আসাম থেকে দশরথ গৌড় নামে এক ঠাকুর পোড়াবাড়ীতে আসেন। তিনি ধলেশ¡রী নদীর মিষ্টি পানি আর এখানকার গরুর গাঢ় দুধ দিয়ে ‘চমচম’ নামের এ মিষ্টি তৈরি করেন। পোড়াবাড়ীর পানিতে রয়েছে এই মিষ্টি তৈরির মূল রহস্য।
বালিশ মিষ্টি : নেত্রকোনা জেলার একটি প্রসিদ্ধ মিষ্টি এটি। আকারে বালিশের মতো বড় না হলেও দেখতে অনেকটা বালিশের মতো এবং এর ওপরে ক্ষীরের প্রলেপ থাকাতে একটি কভারওয়ালা বালিশের মতো দেখতে হয়।
ছানামুখী : এটি বি-বাড়িয়া জেলায় পাওয়া যায়। মিষ্টিটি ছানার তৈরি চারকোনা ক্ষুদ্রাকার এবং শক্ত, এর ওপর জমাটবাঁধা চিনির প্রলেপযুক্ত থাকে। খেতে খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
কালোজাম : এটি বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই তৈরি করা হয়। কালোজাম বা গুলাব জামুন দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালের একটি জনপ্রিয় মিষ্টি খাদ্য। কালচে-লাল রঙের মিষ্টি; যা ময়দার গোলায় চিনি, ছানা ও মাওয়া মিশিয়ে ঘিয়ে ভেজে সিরায় জ্বাল দিয়ে বানানো হয়। এই মিষ্টি মূল প্রক্রিয়ায় রয়েছে তেলে ভাজা ও সিরাপের মাঝে ভিজিয়ে রাখা। কালোজাম তৈরির উপকরণের মাঝে রয়েছে গুঁড়ো দুধ, তরল দুধ, বেকিং পাউডার, মাওয়া, তেল, পানি, এলাচ গুঁড়ো, কেশার, চিনি। কালোজাম এসেছে একরকম আরবীয় মিষ্টি নাম ‘লৌকোমাদেস’ (খড়ঁশড়ঁসধফবং) থেকে। এই মিষ্টি মোগল আমলে খুব জনপ্রিয় ছিল। মাঝে মাঝে সিরাপ ব্যবহার করা হতো। এই মিষ্টির কদর সুদূর তুর্কি পর্যন্ত চলে গেছে।
প্রাণহারা : প্রাণহারা সন্দেশের গোলায় গোলাপ পানি মিশিয়ে মাওয়ার প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা এক ধরনের মিষ্টি। এটি খেতে বেশ সুস্বাদু।
মকড়ম : ডিমের সাদা অংশকে ফেটিয়ে চিনি মিশিয়ে জমাট বাঁধিয়ে মকড়ম নামের মিষ্টি প্রস্তুত করা হয়। এই মিষ্টি মুখে দিলে গলে যায়। মিষ্টিটি পুষ্টিকর।

এছাড়া অন্যান্য বিখ্যাত মিষ্টির মধ্যে রয়েছে বিক্রমপুর ও কলাপাড়ার রসগোল্লা, যশোরের খেজুরগুড়ের সন্দেশ, খুলনা ও মুন্সীগঞ্জের আমৃতি, নওগাঁর প্যাড়া সন্দেশ, ময়মনসিংহের আমিরতি, যশোরের খেজুর রসের ভিজা পিঠা, মাদারীপুরের রসগোল্লা, রাজশাহীর তিলের খাজা, নওগাঁর রসমালাই, পাবনার প্যারাডাইসের প্যাড়া সন্দেশ ও পাবনার শ্যামলের দই, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পানিতোয়া, কুষ্টিয়ার মহিষের দুধের দই, স্পেশাল চমচম ও তিলের খাজা, মেহেরপুরের সাবিত্রী মিষ্টান্ন, মানিকপুর-চকরিয়ার মহিষের দই, গাইবান্ধার রসমঞ্জুরি, ঢাকার পূর্ণিমার জিলাপি, রেশমি জিলাপি, কিশোরগঞ্জের তালরসের পিঠা ইত্যাদি।
মিষ্টি খেতে কমবেশি সবাই ভালোবাসে। আর এতক্ষণ মিষ্টি নিয়ে যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হলো, আশা করি কোথাও বেড়াতে গেলে এখন থেকে এই মিষ্টিগুলো অবশ্যই খুঁজে নেবে এবং খেতে ভুলবে না।