মিষ্টি পরিচয়
পুরো দেশেই ছড়িয়ে আছে নানা পদের, নানা স্বাদের মিষ্টি। সবাই সব রকমের স্বাদ সম্পর্কে জানেনও না। আজ কিছু মিষ্টির কথা জানা যাক—
পুরো দেশেই ছড়িয়ে আছে নানা পদের, নানা স্বাদের মিষ্টি। সবাই সব রকমের স্বাদ সম্পর্কে জানেনও না। আজ কিছু মিষ্টির কথা জানা যাক—
পাতক্ষীর:
পাতক্ষীর অন্য রকম মিষ্টি। স্বাদে, গন্ধে ও চেহারায় খুবই আলাদা।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান বাজারের কাছে সন্তোষপাড়া গ্রামেই একমাত্র এটি তৈরি
হয়। গরুর দুধ জ্বাল দিতে দিতে ঘন হয়ে এলে বিশেষ পাতিলে রাখা হয়। এতে
সামান্য চিনি মেশানো হয়। ঠাণ্ডা হয়ে এলে কলাপাতায় মুড়িয়ে বিক্রি করা হয়।
পাতায় মোড়ানো হয় বলে নাম হয়েছে পাতাক্ষীর, যা কালক্রমে হয়ে গেছে পাতক্ষীর।
সন্তোষপাড়ায় এখন সাতটি পরিবার এটি তৈরি করে। একটি পরিবার দিনে ৫০টি
পাতক্ষীর তৈরি করতে পারে।
ডোমারের সন্দেশ: দুধের
ছানা, চিনি আর খেজুর গুড়ের মিশ্রণে বিশেষভাবে তৈরি হয় এ সন্দেশ। পাওয়া যায়
নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়। নীলফামারী ছাড়িয়ে এর খ্যাতি এখন সারা দেশে।
আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে ডোমারের
সন্দেশ। ডোমার উপজেলা সদরের আদি দাদাভাই হোটেল অ্যান্ড মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও
পলি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এর জন্য খ্যাত। ৭০ বছর ধরে এ দুটি প্রতিষ্ঠান
সন্দেশ তৈরি করছে। দাম প্রতি কেজি ৩২০ টাকা।
চ্যাপ্টা
রসগোল্লা: মহিষের খাঁটি দুধের ছানা দিয়ে তৈরি হয় চ্যাপ্টা আকারের
রসগোল্লা। এটি ‘ম্যানেজারের চ্যাপা রসগোল্লা’ নামে পরিচিত। ৬৩ বছর ধরে এর
সুনাম অক্ষুণ্ন। বাইরের কেউ এলে মৌলভীবাজারের মানুষ এ রসগোল্লা দিয়ে
আপ্যায়ন করেন। ফিরে যাওয়ার সময়ও সঙ্গে এক প্যাকেট দিয়ে দেন। মহিষের দুধের
ছানা বিশেষ পদ্ধতিতে কেটে এ রসগোল্লা তৈরি করা হয়। ছানার সঙ্গে অন্য কিছু
মেশানো হয় না।
রাজশাহীর রসকদম: রাজশাহী শহরের প্রায়
সব হোটেলেই রসকদম পাওয়া যায়। মিষ্টিটির বয়স প্রায় ৩২ বছর। রসকদম তৈরিতে
লাগে দুধ, ছানা, চিনি, চিনির গুলি, সাদা দানা। প্রথমে দুধ, ছানা ও চিনি
দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হয়। গরম থাকা অবস্থায়ই আরো কয়েক মিনিট
ভালোভাবে নাড়তে হয়। ঠাণ্ডা হলে ছোট ছোট গোল্লা তৈরি করা হয়। তারপর এগুলো
সাদা মিষ্টিদানা দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে আধঘণ্টা সময় লাগে।
পোড়াবাড়ীর
চমচম: ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের কথা। টাঙ্গাইল শহর থেকে চার কিলোমিটার
পশ্চিমে পোড়াবাড়ীতে ছিল লঞ্চঘাট। খরস্রোতা ধলেশ্বরীর পাশে ঢালান শিবপুর
ঘাটে ভিড়ত স্টিমার, যাত্রীবাহী লঞ্চ আর মালবাহী বড় বড় জাহাজ। তখন পোড়াবাড়ী
ছিল জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্র। সে সময় আসাম থেকে দশরথ গৌড় নামে এক ঠাকুর
পোড়াবাড়ীতে আসেন। তিনি ধলেশ্বরী নদীর মিষ্টি পানি আর এখানকার গরুর গাঢ় দুধ
দিয়ে ‘চমচম’ নামের এ মিষ্টি তৈরি করেন। পোড়াবাড়ীর পানিতে রয়েছে এই মিষ্টি
তৈরির মূল রহস্য।
বালিশ: নেত্রকোনা জেলার একটি
প্রসিদ্ধ মিষ্টি। আকারে যথেষ্ট বড়, দেখতে অনেকটা বালিশের মতো। এর ওপর
ক্ষীরের প্রলেপ থাকায় এটি দেখতে হয় কভারওয়ালা বালিশের মতো।
ছানামুখী:
এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় পাওয়া যায়। ছানার তৈরি মিষ্টিটি চার কোনা,
ক্ষুদ্রাকার ও শক্ত। এর ওপর জমাটবাঁধা চিনির প্রলেপ যুক্ত থাকে। খেতে খুবই
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
কালোজাম: বাংলাদেশের প্রায় সব
জায়গায়ই তৈরি করা হয়। কালোজাম বা গুলাব জামুন দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ,
ভারত, পাকিস্তান, নেপালের একটি জনপ্রিয় মিষ্টি। এটি কালচে লাল রঙের; যা
ময়দার গোলায় চিনি, ছানা ও মাওয়া মিশিয়ে ঘিয়ে ভেজে সিরায় জ্বাল দিয়ে বানানো
হয়। এ মিষ্টি তৈরির মূল প্রক্রিয়ায় রয়েছে তেলে ভাজা ও সিরায় ভিজিয়ে রাখা।
কালোজাম তৈরির উপকরণের মধ্যে রয়েছে গুঁড়ো দুধ, তরল দুধ, বেকিং পাউডার,
মাওয়া, তেল, পানি, এলাচ গুঁড়ো, কেশার চিনি। কালোজাম এসেছে আরবীয় মিষ্টি
‘লৌকোমাদেস’ (খড়ঁশড়ঁসধফবং) থেকে। এ মিষ্টি মোগল আমলে খুব জনপ্রিয় ছিল। মাঝে
মধ্যে সিরা ব্যবহার করা হতো। এ মিষ্টির কদর সুদূর তুর্কি পর্যন্ত চলে
গেছে।
প্রাণহারা: প্রাণহারা সন্দেশের গোলায় গোলাপ পানি মিশিয়ে মাওয়ার প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা এক ধরনের মিষ্টি। এটি খেতে বেশ সুস্বাদু।
মকড়ম:
ডিমের সাদা অংশকে ফেটিয়ে এতে চিনি মেশানো হয়। এটি জমাট বাঁধলে মকড়ম
প্রস্তুত করা হয়। এ মিষ্টি মুখে দিলে গলে যায়। মিষ্টিটি পুষ্টিকর।
Source: http://www.bonikbarta.com
No comments:
Post a Comment