Pages

Wednesday, November 13, 2013

গৌরনদীর ঐতিহ্য দধি-মিষ্টি

গৌরনদীর ঐতিহ্য দধি-মিষ্টি


জীবন-জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ ৫০ বছর পূর্বে এ পেশায় যোগদান করেছি। নানা প্রতিকূলতার মাঝে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এ পেশাকে অাঁকড়ে ধরে রেখেছি। দেশের ঐতিহ্য বরিশালের গৌরনদীর দধি-মিষ্টি আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। ভোজনবিলাসী মানুষের কাছে গৌরনদীর দধি-মিষ্টি ছাড়া ভোজন রসনা যেন অসমাপ্ত। ঐতিহ্যগত কারণেই ক্রেতা সাধারণের কাছে দধি-মিষ্টি লোভনীয় সামগ্রী। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে গৌরনদীর কিছু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে গুণগত মান খারাপ করে থাকে। তারই মধ্যে সুনামকে ধরে রাখতে অধিক মুনাফার কথা চিনত্মা না করে গৌরনদীর ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য দধি-মিষ্টি তৈরি করে আসছি। বর্তমানে ভাল জিনিস তৈরি করা খুবই কষ্টকর" কথাগুলো বলছিলেন, বংশগতভাবে দধি-মিষ্টি তৈরির পেশায় আসা ও ৫০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনাকারী গৌরনদী বন্দরের গৌরনিতাই মিষ্টান্ন ভা-ারের স্বত্বাধিকারী শচিন্দ্র নাথ ওরফে সচিন ঘোষ (৭৮)। গৌরনদীর ঐতিহ্য দধি, মিষ্টি, ঘি'র সুনাম শুধু বাংলাদেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও এর কদর রয়েছে। বহুকাল থেকে দধি, মিষ্টি, ঘি'র জন্য গৌরনদী বিখ্যাত।
সূত্রমতে, প্রায় দু'বছর আগে ডাওরী ঘোষ নামের এক ঘোষ গৌরনদীতে তৈরি করেছিলেন এ লোভনীয় খাবার। পর্যায়ক্রমে গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী ভোজ্যপণ্যের ধারা ধরে রাখার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন শচিন ঘোষ। এর আগে গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী ভোজ্যপণ্যের ধারা ধরে রেখেছিলেন গেদু ঘোষ, সচিন ঘোষ, জীবন ঘোষ, ঝন্টু ঘোষ ও দিলীপ ঘোষ। তারা ঐতিহ্যবাহী দধি, মিষ্টি, ঘি তৈরি করে সারাদেশে সরবরাহ করে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। পরে তাদের পাশাপাশি কিছু মুসলিম ব্যবসায়ী ঘোষ কারিগরের সহয়তায় এ ব্যবসা শুরম্ন করে সুনাম ধরে রাখেন। সারাদেশে গৌরনদীর দধি, মিষ্টি, ঘি'র যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিবাহ অনুষ্ঠান, বৌভাত, জন্মদিন, মৃতু্যবার্ষিকীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন তদবিরে দধির জন্য দূর-দূরানত্ম থেকে লোকজন আসেন গৌরনদীতে। প্রতিদিন শত শত মণ দধি, মিষ্টি এখান থেকে ঢাকা-বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে চালান দেয়া হয়। দেশের বাইরেও ব্যাপকভাবে গৌরনদীর দধি, মিষ্টি, ঘি'র সুনাম রয়েছে। গৌরনদীর দধির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ১০/১৫ দিনেও স্বাভাবিক আবহাওয়ায় নষ্ট হওয়ায় সম্ভাবনা নেই। যে কোন যানবাহনে সহজে বহন করা যায়। শুকনো মিষ্টি ১ মাসেও নষ্ট হয় না। ঘি ১ বছরেও নষ্ট হয় না।
সচিন ঘোষ জানান, তিনি ১২০ প্রকারের লোভনীয় মিষ্টি তৈরি করতে পারেন। তবে বর্তমানে ১৫ প্রকারের মিষ্টান্ন দ্রব্য তৈরি করেন। এরমধ্যে দধি, চমচম, কালোজাম, শুকনো মিষ্টি, লাদেন মিষ্টি (বড় রসগোলস্না) রসমালাই, ছানার সন্দেশ, ক্ষীরপুরি, মাওয়া, ছানার জিলাপি উলেস্নখযোগ্য। তিনি আরও জানান, ১৯৯০ সালে তার দোকানের কারিগর রণো ঘোষ ডিবি লটারির মাধ্যমে আমেরিকা গমন করে। সেখানে সে (রণো ঘোষ) গৌরনদী মিষ্টান্ন ভা-ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। তার দোকান থেকে শুধু আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীরাই নয়, খোদ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের কাছে সে (রণো ঘোষ) দধি-মিষ্টি বিক্রি করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। গৌরনদীর ঘোষেরা জানান, ১৯৭৪ সালে ঘোষদের জন্য রেশম পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর থেকে সরকারী কিংবা বেসরকারীভাবে সহযোগিতা পাচ্ছেন না গৌরনদীর দধি, মিষ্টি প্রস্তুতকারীরা। ব্যবসায়ীরা চড়া দামে দুধ ক্রয় করে ঘর ভাড়া, বিদু্যত বিল, কর, লাকড়ি খরিদ, কর্মচারীদের বেতন, টালিসহ বিভিন্ন দ্রব্য ক্রয় করে তাদের ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী দধি, মিষ্টি, ঘি'র ঐতিহ্য ধরে রেখে ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ, দুধের বাজার, ডেইরি ফার্ম স্থাপন এখন জরম্নরী হয়ে পড়েছে। আর এ জন্য তারা সংশিস্নষ্ট দফতরের হসত্মক্ষেপ কামনা করেছেন।
_খোকন আহম্মেদ হীরা, গৌরনদী

1 comment:

  1. ভাই কোন গৌরনদীর ভাল মিস্টির দোকানের নাম্বার দিতে পারবেন?

    ReplyDelete